অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কী? অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে করব?

আপনি যদি অনলাইন থেকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করতে চান তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করার যত খুঁটিনাটি বিষয় রয়েছে সবকিছু আজকের এই পোস্টের পরিষ্কার করে বলা হবে।

এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়লে,  অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কী? অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে করব?  আপনি সবকিছু সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা পাবেন।

তো চলুন জেনে নেয়া যাক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত।  আমরা প্রথমেই জেনে নেবো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং আসলে কি?

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কী?

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এমন একটা পদ্ধতি যে পদ্ধতিতে আপনি কোন একটা কোম্পানির পণ্য বা সেবা ক্রেতার নিকট বিক্রি করে কমিশন পাবেন।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আপনি ২% থেকে সর্বোচ্চ ৭০% পর্যন্ত কমিশন পেতে পারেন।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ধরুন আপনি amazon .com এর একটা প্রোডাক্ট যেমন ল্যাপটপ বিক্রি করলেন ৫০,০০০ টাকা।  এবং আপনি যদি কমিশন ৫ শতাংশ  পান তাহলে আপনার আয় হবে আড়াই হাজার টাকা।

 

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি কিভাবে?

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কোম্পানি গুলো অটোমেটিক সফটওয়্যার এর মাধ্যমে পরিচালনা করে থাকে এবং অটোমেটিকভাবে কমিশন নির্ধারণ হয়ে যায়।  এফিলিয়েট মার্কেটিং কোম্পানিগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর তাদের পেমেন্ট তোলার ব্যবস্থা করে থাকে।  এফিলিয়েট মার্কেটিং মূলত বাড়িতে বসেই আপনি অনলাইন মার্কেটিং করে অথবা ইউটিউব মার্কেটিং করে কোন কোম্পানির পণ্য বা সেবা বিক্রয় করে কমিশন উপার্জন করতে পারবেন।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সেবা বা পণ্যের প্রকারভেদ

১. ডিজিটাল প্রোডাক্ট

ডিজিটাল প্রোডাক্ট নয় এমন এক ধরনের প্রোডাক্ট যেগুলো দৃশ্যমান নয় কিন্তু ভার্চুয়াল প্রযুক্তি ব্যবহার করে দৃশ্যমান করে ব্যবহার করা হয়। যেমন ই-বুক, ডোমেইন এবং হোস্টিং, বিভিন্ন রকম সফটওয়্যার, অনলাইন ক্লাস, ভিডিও ইত্যাদি।

 

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোডাক্ট হচ্ছে ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রি করা। ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রির মাধ্যমে আপনি কম থেকে বেশি পরিমাণ কমিশন পেতে পারেন।  এজন্য ডিজিটাল প্রোডাক্ট  আফিলিয়েট মার্কেটারদের মধ্যে খুব জনপ্রিয়।

 

২. ফিজিক্যাল প্রোডাক্ট

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে ফিজিক্যাল প্রোডাক্ট গুলো হলো আমরা যেগুলো দৈনন্দিন জীবনে সচরাচর ব্যবহার করে থাকি।  যেগুলো বাস্তব জীবনে দৃশ্যমান। যেমন: ইলেকট্রনিক্স পণ্য, বিভিন্ন ফার্নিচার ও খাদ্যদ্রব্য ইত্যাদি।

এ ধরনের পণ্যগুলোর কমিশন সাধারণত দুই শতাংশ থেকে বিশ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে।

তবে ফিজিক্যাল প্রোডাক্টগুলো বিক্রি করার ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল করার বিষয় হচ্ছে আপনি যে কোম্পানির পণ্য নিয়ে কাজ করছেন সেই কোম্পানি ঠিকমতো ডেলিভারি কার্যাদি সম্পন্ন করতে পারছে কিনা !  এটা আপনাকে আগে থেকে ভালো করে বিস্তারিত জেনে নিতে হবে।

 

৩. লিড জেনারেশন

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সবচেয়ে জনপ্রিয় ও চাহিদা সম্পন্ন একটা প্রোডাক্ট হলো লিড জেনারেশন করা।  এখানে শুধু আপনাকে কোন কোম্পানির পণ্যের মার্কেটিং করতে হবে তবে সেই পণ্য আপনাকে বিক্রি করতে হবে না।  তবুও আপনাকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ আপনার কাজের উপর কমিশন দিবে।  এ ধরনের পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে ভিডিও, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস, অ্যাপ সাইন আপ ও ই-মেইল সাবস্ক্রিপশন করা ইত্যাদি।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আপনি কোন একটা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস এর লিঙ্ক আপনি  কাঙ্খিত ক্রেতাদের নিকট উপস্থাপন করে তাদেরকে ইন্সটল করতে বলবেন।  আপনার কাঙ্খিত ক্রেতারা যখন আপনার দেওয়া ঐ লিংক থেকে অ্যাপটি ইন্সটল করবে তখন সেই ইন্সটল এর বিনিময়ে আপনি একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন পাবেন।

 

সম্পর্কিত এই আর্টিকেলগুলো আপনার ভালো লাগতে পারে –

 

কোথায় থেকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শিখব?

আপনি যদি একজন পেশাদার হিসেবে একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে চান তবে অবশ্যই আপনাকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর খুটিনাটি সব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হবে।  যেটা আপনি দুটি উপায়ে শিখতে পারেন তার মধ্যে একটা হল একদম ফ্রিতে  এবং আর একটা হল পেইড।

 

১. ফ্রী অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শেখা

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শেখার দুটি মাধ্যমের মধ্যে অন্যতম একটা হল ফ্রিতে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শেখা।  ফ্রিতে এফিলিয়েট মার্কেটিং শিখতে হলে অবশ্যই আপনাকে কষ্ট করতে হবে বেশী ও বেশী সময় লাগবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শিখতে।

যদি আপনি ফ্রিতে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শিখতে চান তাহলে আপনাকে একটু কষ্ট করে গুগলে বা ইউটিউবে সার্চ করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও টিউটরিয়াল অথবা আর্টিকেল পড়ে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।  আপনি চাইলে বিনা খরচে বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট থেকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও সংগ্রহ করে এ দক্ষতা বহুগুণে বাড়িয়ে নিতে পারেন।

 

২. পেইড অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শেখা

এফিলিয়েট মার্কেটিং শেখার আর একটা গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো পেইড অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কোর্স  করা । টাকা খরচ করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার ক্ষেত্রেও রয়েছে একটা প্রতিবন্ধকতা আর যেটা হলো আপনাকে অনেক কিছুই আবার ইউটিউব ও গুগল সার্চ করে শিখে নিতে হবে কারণ কিছু কিছু বিষয় অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

তবুও আপনি চাইলে আপনি কোন অনলাইন প্লাটফর্ম বা প্রতিষ্ঠান থেকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে কোর্স করে বেসিক নলেজটা ভালোভাবে অর্জন করতে পারবেন।  এজন্য আপনাকে অবশ্যই ভালো পরিমাণ টাকা খরচ করতে হবে।  যেটা ৫ থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত হতে পারে।

 

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয়

ধরুন আপনি কষ্ট করে ফ্রিতে অথবা পেইড অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কোর্স করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ভালভাবে রপ্ত করলেন।  এখন প্রশ্ন আপনার মনে হতে পারে যে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে কত টাকা ইনকাম করা আসলে সম্ভব ?

এ প্রশ্নের উত্তর শুনে আপনি চমকে উঠতে পারেন।  কারণ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আনলিমিটেড ইনকাম করা সম্ভব।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং একটা মুক্ত পেশা যেটা আপনি চাইলে ২৪ ঘন্টায় করতে পারেন।  অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য আপনার দরকার হবে একটা ভালো মানের ওয়েবসাইট অথবা ইউটিউব চ্যানেল ।  আপনার ইউটিউব অথবা ওয়েবসাইটে যদি ভালো পরিমান ভিজিটর থাকে তাহলে আপনি একটা ভালো পরিমাণ টাকা ইনকাম করতে পারবেন কমিশনের মাধ্যমে।

আপনার ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও ডেসক্রিপশনে অথবা ওয়েবসাইটে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর লিংক শেয়ার করে আয় করতে পারবেন এবং সেই লিঙ্ক থেকে যতগুলো পণ্য বা সেবা বিক্রি হবে তার উপর ভিত্তি করে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন আপনাকে এই পণ্য বা সেবা প্রতিষ্ঠান আপনাকে কমিশন দেবে।

 

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে করব?

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে যদি আয় করতে চান তবে অবশ্যই আপনার একটা ভালো মানের ওয়েবসাইট বা ইউটিউব চ্যানেল থাকা অত্যাবশ্যক।

সেই ওয়েবসাইট বা ভিডিও ইউটিউব চ্যানেলে আপনাকে ভালো মানের নিয়মিত আপনি চাইলে সে সব পণ্য রিভিউ নিয়ে  কনটেন্ট পাবলিশ করে যেতে হবে। সেই কনটেন্টে যে ভিজিটর আসবে তাদের কাছে আপনার পণ্য বা সেবা বিক্রয় করতে হবে। এভাবে তাদের নিয়ে পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে আপনি নির্দিষ্ট পরিমাণে একটা কমিশন পাবেন।  আর এই কমিশন হল আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইনকাম এর উৎস  ।

আপনি যদি পূর্ব থেকে ভালোভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং রপ্ত করতে পারেন তাহলে খুব সহজেই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করে ভালো পরিমাণ ইনকাম করতে পারবেন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার মাধ্যমে।

এফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করার পূর্বে আপনাকে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। তার মাঝে অন্যতম একটা হল আপনাকে একটা ভালো মানের পণ্য নির্বাচন করতে হবে এগুলোর চাহিদা রয়েছে।  এরপর আপনাকে আপনার ওয়েবসাইট বা  ইউটিউব চ্যানেলের ভালোভাবে এসইও করতে হবে।  এরপর আপনার কাজ হবে পারলে ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে একটা ভালো জ্ঞান অর্জন করা।  এতে করে আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করাটা সহজ হবে।  অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে করব?  উত্তরটা এখন পেয়েছেন এখন।

 

সারকথা

তো এই ছিল, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কী? অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে করব?  সে সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ একটা আর্টিকেল।  আশা করছি, আপনি যদি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটা ভালো ভাবে মনোযোগ দিয়ে পড়েন তবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে একটা ধারণা পাবেন।  আপনি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হলে তাহলে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে বলে আমি মনে করছি।

Leave a Reply